কাপ ডিশগুলো ধুয়ে রাখতে গিয়ে মনে পড়ল আজ আমার মায়ের জন্মদিন | মা কোনদিন এইসব দিনগুলোকে অনেক লোক ডাকার উপলক্ষ্য হয়ে উঠতে দিতো না | চুপচাপ আর দশটা আটপৌরে দিনের মতন এইদিনটাকে কাটিয়ে, একেবারে রাতে হেসে বলত, “জানিস টুপুর, আজকে আমার জন্মদিন!”
আমি মাকে জড়িয়ে ধরতাম |আমার দেওয়া এই উপহার, মাকে আমাদের এই সংসারে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছিল |
খালি বলত,”তুই তাড়াতাড়ি বড় হ | তাহলে আমার কোন চিন্তা থাকবে না |”
মায়ের চিন্তা ছিল | বাবার ছিল না |বাবা চাকরি করত | মাইনে পেত| বাড়িতে এসে পুরো টাকাটা মাকে দিয়ে দিত | তারপর আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মায়ের কাছে হরেকরকমের আবদার করত | বাবা বলত বাবার সাফারী স্যুট চাই, নতুন জুতো চাই, একটা এটাচি কেস চাই…| আরো যে কত কি তার হিসেব নেই | আমিও তাল ঠুকে কমিকস বুক, গন্ধওয়ালা রবার আর ফুটবল চাইতাম | আমাদের কথায় মায়ের গভীর চোখ দুটো কখন কখন অসহায় হয়ে যেত; আবার মাঝে মাঝে ভোরের আলোর মতন শান্ত, সুন্দর হয়ে উঠত | আমরা দেখতাম না | সরু সরু আঙুল দিয়ে জানলার রড জড়িয়ে ধরে মা কেবল বলত,” আসছে শীতে আমরা বেড়াতে যাব |”
আমরা বেড়াতে যাই নি | দিনগুলো চলে গেছে চুপিসাড়ে একে একে | অঘ্রান মাসের গাছের পাতার মতন খসে পড়ে গেছে বছরগুলো | বাবা হারিয়ে গেছে অতীতে |
কাপ ডিশগুলো ধুয়ে রাখতে গিয়ে মনে পড়ল আজ আমার মায়ের জন্মদিন | এখন মা অনর্গল কথা বলে | একা একা নিজের মনে সে সারাদিন ধরে তার ইচ্ছেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে চলে | আমি প্রয়োজন ছাড়া মায়ের ঘরে এখন আর যাই না |