‘রেললাইনের ধার। ঘাসের মধ্যে এক রকম ফুল গজিয়েছে। লাল আর সাদা। ছোট, ছোট – অসংখ্য। একটা লম্বা ঘাসের ডগায় একটা ফড়িং এসে বসেছে – থরথর করে কাঁপছে তার ডানা। একটা ঢোঁড়া সাপ সড়সড় করে রেল লাইনের পাশের নালায় নেমে। ছোটখাটো অনেক বাতিল জিনিসপত্র লাইনের উপর ছড়িয়ে আছে। খেলনা, বাচ্চাদের জুতো। প্লাস্টিকের বাসন, হাতপাখা, বাদামী হয়ে যাওয়া কাগজপত্র, ছেঁড়া ব্যাগ, ভাঙ্গা ছাতা – আরও কত কি। ভোরে বৃষ্টি হয়ে গেছে একপশলা। ভিজে স্যাঁতস্যাঁত করছে জিনিসগুলো। আজকাল বৃষ্টি বেশি হয়।
স্লিপারগুলোর ওপর শ্যাওলা। ব্যাঙের ছাতা গজিয়েছে। একটা বুড়ো গাধা লাইনের পাশে ঘাসে মুখ ঢুকিয়ে খেয়ে চলেছে। শিমূল গাছ থেকে চিলের ছেঁড়া ছেঁড়া চিৎকার শোনা যায়। ঝিমুতে ঝিমুতে গাধাটার মনের পড়ল, এইখানেই একদিন তিনটে দু-পেয়ে জন্তু আর একটা দু-পেয়ে’কে মেরেছিল। মারা যাওয়া দু-পেয়ে’টা লাইনের ওপর মুখ গুঁজে পড়েছিল – অন্য তিনটে দুড়দাড় করে কোথায় যেন ছুটে চলে গিয়েছিল। তারও কিছুদিন পরেই অনেকগুলো দু-পেয়ে জন্তু এই লাইনগুলো দিয়ে ধাক্কা খেতে খেতে আর ধাক্কা দিতে দিতে চলে গিয়েছিল। যে দু-পেয়েটা ওকে খেতে দিত, বোঝা বওয়াতো সেটাও একটা ছোট দু-পেয়ের হাত ধরে তাদের সঙ্গেই চলে গিয়েছিল।
কতকিছু পড়ে গেল তাদের হাত থেকে। ওই তো এখনও পড়ে আছে। আরও কি যেন মনে পড়ে গাধাটা হঠাত ঘ্যাঁকো ঘ্যাঁকো বলে ডেকে উঠল – সে ডাকে ভয় পেয়ে একটা বহুরূপী খচমচ করে পাশের ঝোপের মধ্যে চলে গেল। সূর্য্যও আজকের মত ডুবে গেল।
ঘনায়মান অন্ধকারে বাতিল রেললাইনের ধারে শুধু মাঝে মাঝে শোনা যেতে লাগল একটা বুড়ো গাধার ক্লান্ত ডাক।